ঢাকা , রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ , ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
চলতি সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা শহর-গ্রামাঞ্চলে বন্যা বিপর্যস্ত জনজীবন আধিপত্যে রক্তাক্ত পাহাড় নারায়ণগঞ্জে বৈধ কারখানায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন শুধু অভিযোজন নয় দরকার বিশ্বব্যাপী নির্গমন হ্রাস-পরিবেশ উপদেষ্টা সংলাপের নামে নাটক করছেন প্রধান উপদেষ্টা- কাজী মামুন খুলনায় ৬০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঘোষণা ঢাকায় বসবাসরত সাংবাদিকদের মধ্যে বন্ডিং তৈরি করতে হবে মসজিদ নির্মাণ নিয়ে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত বাড়িঘরে ভাঙচুর-লুটপাট মাউশিতে বদলি বাণিজ্য ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি কেলেঙ্কারি তদন্ত শুরু সেঁওতি বাগানে টিএসআই রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন শ্যামপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের তিন সদস্য গ্রেফতার বোনের বাসায় বেড়াতে এসে বখাটের হাতে তরুণ খুন কর ব্যবস্থায় বড় বাধা দুর্নীতি-এনবিআর চেয়ারম্যান প্রেমের ফাঁদে ফেলে কিশোরীকে ধর্ষণ কথিত প্রেমিকসহ গ্রেফতার ৩ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ রাজশাহীর সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিলেন ঠিকাদাররা পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের বাঁকে বাঁকে মৃত্যুফাঁদ ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ১৬৪ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ মহড়া শুরু
* পেশাগত সমস্যা সমাধান না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা

পল্লী বিদ্যুতে মাঠ পর্যায়ে অস্থিরতা বাড়ছে

  • আপলোড সময় : ২৬-০৭-২০২৫ ০৩:০৪:০৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-০৭-২০২৫ ০৩:০৪:০৭ অপরাহ্ন
পল্লী বিদ্যুতে মাঠ পর্যায়ে অস্থিরতা বাড়ছে
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব ও সংকট নিরসনে সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন ৮ মাসেও দাখিল হয়নি। এর ফলে পেশাগত সমস্যা সমাধান না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনে পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানান, সরকারের লিখিত আশ্বাসে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-পিবিএস সিস্টেম সংস্কারে দীর্ঘদিনের চলমান আন্দোলন গত ৫ জুন স্থগিত করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে গত ১৭ জুন আরইবি-পিবিএস একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিতরণ সংস্থার মতো কোম্পানি গঠনের সুপারিশ প্রণয়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণ, মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল, সব সংযুক্ত ও সাময়িক বরখাস্তকৃত এবং অন্যায়ভাবে বদলিকৃতদের পদায়নের লক্ষ্যে পৃথক দুটি কমিটিও গঠন করা হয়।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, আন্দোলন স্থগিতের প্রায় দুই মাস পার হলেও অপেক্ষাকৃত সহজ এবং স্বল্প সময়ে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয়গুলোর কোনো অগ্রগতি নেই। যেমন-মামলা প্রত্যাহার, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল, লাইনক্রুদের হয়রানিমূলক বদলি স্থগিতসহ সব হয়রানিমূলক বদলি আদেশ পুনর্বিবেচনা, সাময়িক বরখাস্ত ও সংযুক্তদের পদায়ন, চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিতকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এছাড়া, আন্দোলনের সময় কর্মস্থলে যোগদান করতে না পারা ৫ জন লাইনক্রুর বিষয়টিও নিষ্পত্তিহীন রয়েছে। স্বল্প সময়ে সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য গত ১৯ জুন এবং ১ জুলাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও ফলপ্রসূ সমাধান পাওয়া যায়নি। যা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি দীর্ঘ আট মাসেও প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এছাড়া সহজে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয়গুলোর সমাধান না হওয়ায় অনিয়মিত শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিতকরণ কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিরাজমান অবস্থায় কর্মী অসন্তোষ হ্রাস এবং সমিতির কর্মপরিবেশ স্থিতিশীল করতে অপেক্ষাকৃত সহজ এবং স্বল্প সময়ে সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো চলতি মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে অনুরোধ করেন তারা। একই সঙ্গে হয়রানির উদ্দেশ্যে আরইবির ছয় ধরনের অডিটিং বন্ধ করে স্থায়ী সংস্কারের আগে আরইবি ছাড়া সরকারি অন্যান্য অডিট চলমান রাখার অনুরোধ করেন তারা। অন্যথায়, মাঠ পর্যায়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এরআগে গত ৪ জুন ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির মিলনায়তনে ক্যাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল সমাধানে সরকার ব্যর্থ। তিনি বলেন, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও অস্থিরতা এখন চরমে। এই অবস্থায় পবিস ও আরইবির চলমান সংকটের একমাত্র সমাধান হিসেবে দুই প্রতিষ্ঠানকে এক ও অভিন্ন চাকরিবিধির আওতায় আনার সুপারিশ করেছেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেছেন, সমস্যা সমাধান না করে বরং সমস্যার আগুনেই ঘি ঢেলে এডিবি-বিশ্বব্যাংকের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগুচ্ছে সরকার। বিশ্বব্যাংক ও এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) পরামর্শে আরইবিকে সেবাখাত থেকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তরের চেষ্টা করছে। বিদ্যমান বিবাদ অবসানে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকেই এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন বেসরকারিকরণের যে ছবক দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি বিগত সরকার। তাদের রেখে যাওয়া দায়ই হয়তো কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে বর্তমান জ্বালানি উপদেষ্টাকে। এই পরিস্থিতির যখন সূত্রপাত হয়, তখন ক্যাবের তরফ থেকে একটা তদন্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রথম খণ্ড সরকারের কাছে জমা দেয়া হলেও সেকেন্ড পার্ট দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত তদন্ত ক্যাব স্থগিত রাখে। কারণ বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে ক্যাব প্রত্যাশিত সহযোগিতা পায়নি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হন বিধায় বিরোধ ও সংঘাত সৃষ্টি হয়। এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য অভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে জাতীয়করণ করা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এর ধারা ৪০ মতে আরইবির বিরুদ্ধে আনিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভিযোগগু?লো নিষ্পত্তি হতে পারে। তিনি বলেন, এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে রিস্ট্রাকচারিংয়ের নামে এ খাত ভেঙে টুকরো টুকরো করে কোম্পানি বানিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ে এখন কমবেশি ৭৫টি কোম্পানি। জনগণের পকেট কেটে আকাশচুম্বী মুনাফা করছে। ঘাটতি মেটানোর কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কোম্পানি হলে ব্যয় আরও বৃদ্ধি হবে। তাতে প্রত্যন্ত পল্লীর নিম্ন আয়ের লোকজনের খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশকে দ্রুত বিদ্যুৎ আমদানি বাজারে পরিণত করার ক্ষেত্রে পল্লী বিদ্যুতের ব্যয়বৃদ্ধি গুরুত্ব পাচ্ছে। এডিবি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বাজারকে আমদানি বাজারে পরিণত করা। ভারতের ক্রসবর্ডার এনার্জি ট্রেডিং পলিসি তারই প্রমাণ। তাই পল্লী বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিকীকরণ করার উদ্দেশ্যে কোম্পানি করার মত গণস্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপের সুস্পষ্টভাবে বিরোধিতা করছে ক্যাব।
উল্লেখ্য, ৮২টি সমিতির মাধ্যমে গ্রামে ৩ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহককে (প্রায় ১২ কোটি মানুষ) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। বোর্ড ও সমিতি একীভূত করে অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং স্থায়ী পদের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করার দাবিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেন সমিতির কর্মীরা। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে বিভিন্ন দফায় কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন তারা। বোর্ড ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর কোনো সমাধান না আসায় বিদ্যুৎ বিভাগ আগস্টে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করে দেয়। সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ-আরইবি অসহযোগিতা এবং বিদ্যমান সিস্টেম বহাল রাখার চিন্তাভাবনার কারণে ওই কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। শুধু তাই নয়, আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ। বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা ঢাকায় বসে নিম্নমানের মালামাল ক্রয় করে দুর্নীতি-লুটপাট করছেন। তাদের কেনা এ নিম্নমানের মালামালের কারণে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স